আন্তর্জাতিক পুং দিবস অথবা বৈশ্বিক টয়লেট দিবস?

by | Nov 19, 2017

পুরুষতন্ত্রের হাতে বিশ্বের নারীদের ওপর হয়ে আসা শতাব্দী প্রাচীণ অত্যাচার এবং তার পরিনামে নারীবাদের জাগরনের অনেকগুলি স্বরূপ আমরা দেখতে পাই। নারীর সমানাধিকারের দাবিতে নারীদর আন্দোলন ধীরে ধীরে সফল হয়েছে, আজ হয়তো বিশ্বের কিছু অংশে  আগের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি সুরক্ষিত এবং বিকশবতী। তাঁদের এই আন্দোলন নানা রূপ নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে, কেউ নিয়মতান্ত্রিক লড়াই করেছেন, কেউবা অধুনা সামাজিক গণমাধ্যমে (পড়ুন ফেসবুক, য়্যুটুব, ট্যুটার) তীব্র আবেগে ভর্ৎসনা করেছেন পুরুষের।

 

এদিকে পুরুষেরাও সচেতন হয়েছে, তবে তাদের সংখ্যা কম। যারা ধর্ম ও পুরুষতান্ত্রিকতার মগজধোলাইয়ের শিকার হয়ে নারীদের হীন জ্ঞাণ করেছে, তাদের কারনে বাকি সচেতন পুরুষেরা শিকার হয়ে নারীবাদীদের ব্রাশ ফায়ারের।

 

এমনি একটি অকারন ব্রাশফায়ার আজ দেখতে পেলাম। পাশের ছবিগুলি দেখুন, আমার পরিচিত কয়েকজন নারীবাদী এই পোস্টগুলি দিচ্ছেন।

আজ জাতিসংঘ আয়োজিত বিশ্ব টয়লেট দিবস। আবার একই সাথে ব্যাক্তিপর্যায়ে গত ত্রিশ বছর ধরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসও বটে।

নারীবাদীরা মুখে একটা ব্যাঙ্গাত্মক হাসি সমেত আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আজ পুরুষ দিবস, এবং টয়লেট দিবস।

তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এই ষড়যন্ত্রের মূল কোথায়? নারীবাদীরাই কি ইচ্ছে করে টয়লেট দিবস এবং পুরুষ দিবস একই দিনে ফেললেন? পুরুষকে টয়লেটের সাথে তুলনা করতে? 

না জনাব। 

বিষয়ের গভীরে যাই, একটু টেকনিক্যাল লাগতে পারে। 

‘দিবস ঘোষণা’র দিন ঠিক করার দায় আদতে ঘোষণাকারীর ওপর বর্তায়। এবং বিশ্বসে দিবস ঘোষণার উৎস একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান নয়। আবার দিবস উদযাপন করা হয় বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সংগঠনের নিজেদের আগ্রহে। এক্ষেত্রে সংগঠনগুলি উদযাপন করলেও, দিবসটির বিষয়ে জনসাধারনের অবগতির দায়িত্ব নেয় গণমাধ্যমগুলি। 

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস এবং বিশ্ব টয়লেট দিবস, একই সংগঠনের উদ্যোগ নয়। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস সেই ১৯৯১ সালে প্রথম প্রসবিত হলেও ১৯৯৯ সালের কাছাকাছি সময় থেকে একটা বৈশ্বিক রূপ পায়। সেই সোভিয়েত আমল থেকে কিছু পুরুষবাদী নারীদিবসের সমতূল্য হবার চেষ্টায় এই দাবি শুরু করেছিলো, তবে বর্তমানে নারীদের অগ্রযাত্রায় পুরুষের বিষয়টিও সমানতালে উঠিয়ে আনা হয়। কারো কাছে এর কারন সন্দেহমূলক, কারো কাছে নিষ্পাপ। 

বিশ্ব পুরুষ দিবসের চিহ্ন

আসলে বিষয়টা তা নয়। 

জাতিসংঘ ঘোষনা করেছে বিশ্ব টয়লেট দিবস, কিন্তু একই দিনে জাতিসংঘ পুরুষ দিবস ঘোষনা করে নাই। 

পুরুষ দিবসটি জাতিসংঘের নয়, এই দিবসটির পেছনে আসলে প্রকৃত কোন সংঘই নেই। ১৯৯১ সালে জনৈক ব্যাক্তি নারীবাদের উত্থাণের সাথে সাথে পুরুষের জন্যও একটি দিবস এনে হাজির করেছিলো। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি ‘উদযাপিত’ হলেও, প্রকৃতার্থে বর্তমানে এই দিবসটি সামাজিক গনমাধ্যমে একটি সিরিয়াসভঙ্গী হাস্যরসেরই বিষয়। 

দিবস উদযাপন হয় গুরুত্ব ও সচেতনতা বাড়াতে, যেমন নিরাপদ টয়লেট বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। অন্যদিকে পুরুষ বিশ্বজুড়ে অবিসংবাদিত একটি শক্তি। নারীকে দমন করতে এই পুরুষবাদ বর্তমানে হয়তো ‘আম্রাও তো দুর্বল, আমাদেরও তো একটু দেখভাল প্রয়োজন’ জাতীয় বাণী প্রসব করতেই পারে, তবে দরকার দেখি না। 

বিশ্বজুড়ে জাতে-জাতে, সাদাতে-কালোতে, ধর্মে-ধর্মে, নারীতে-পুরুষে বিভেদ ও যুদ্ধ লাগিয়ে যাদের লাভ হয়, তাদের বিষয়ে সচেতনতা জরুরী। 

লিঙ্গযুদ্ধ খুউব করে হৌক বিছানাতে, শীৎকারের সাথে সাথে।  😆   😉 

কিন্তু সত্যিকারের যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। 

এবার নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা ভাগাভাগি হৌক, খুব করে।