দিনশেষে আপনার আমার, ফেসবুকজীবি এইসব মোবাইলেকম্পুটারেট্যাবলেটে সময় নষ্ট করা বন্ধুবান্ধবদের ক্ষমতা সীমিত। আপনি আমি কি হইতে পারে, কি হওয়া উচিত চিল্লাইতে চিল্লাইতে গলার রগ ছিড়ে দু্নিয়া উল্টাইয়া ফেলার মতো বিরাট কিছু করার ভান করতে পারি, কিন্তু ওই ডন কিহোটির মতো ছায়ার সাথে যুদ্ধের ভান করার বেশি কিন্তু এইসব কিছুই না। এইসব ব্লগিং বালছাল যে উদ্দেশ্যে শুরু করা হইছিলো, তা সফল হইছে, পাবলিক এখন আর সংঘবদ্ধ হয় না, পাবলিক এখন একাই একশ, ফলাফল একলা।

আপনে পাবলিক, ম্যাঙ্গোপিপল। আপনের কাজ কনজুমার হওয়া, আপনি চাক্রি করবেন, বিয়াশাদী কইরা বাচ্চাকাচ্চা বিঁয়াইয়া সুখী ম্যাঙ্গোর জীবন যাপন করবেন। পাঁচবছরে একবার গিয়া বিজ্ঞাপন মোতাবেক ভোট দিয়া বাড়িত গিয়া নতুন বংশবৃদ্ধি করবেন। এইই আপনার জন্য অর্পিত দায়িত্ব। পরবর্তী পাঁচবছর আসার আগতক্‌ আপনারে কেউ কিছু জিগাইবে না, জানাইবে না, আপনার মতামতের মায়েরে বাপ।

মিডিয়া নামের একটা জিনিসে আপনি চুবাইয়া রাখা, এইটা বোঝার মতো বুদ্ধির অঙ্গ খৎনা করা রাখা আছে, আপনি মিডিয়ার দাস। আগে ছিলো টিভি আর পত্রিকা, সেই যুগ গত হইছে নব্বইয়ের দশকে।

এই যুগে মিডিয়ার জাল আরো বিস্তৃত। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ওয়েবসাইট, মসজিদ, মাইক সবকিছু একই স্বরে ম্যাৎকার দেয়, আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয় এতো প্রকার মিডিয়া সুরসুরি দিন রাইত পকেট, বিছানা, অফিস সবখানে পাইতে পাইতে পুরা দিশেহারা। দিশা হারাইয়া আপনি হত্যা দেন, মিডিয়ার পদযুগলে। মিডিয়া আপনারে বলছে নাস্তিক চুদ্দির পুতেরা আন্দোলন ধ্বংস করসে, আপনি যুদ্ধ, বিচার সবকিছু ভুইলা গেলেন। যুদ্ধের মালিক আম্লীগের সরকারের আমলেই মিডিয়া আপনারে কইলো…” ঘরে যাও বাপধন, নাস্তিক কিন্তু আইলো।‌” আপনে সুরসুর কইরা ঘরে পলাইলেন।

আপনার নিজের স্বাধীন চিন্তাশক্তি নাই। গনতন্ত্রে আপনার, মানে ম্যাঙ্গোপিপলের চোখ কান হওয়ার কথা ছিলো জার্নালিস্টগো, হেরা এখন ছাংবাদিক হয়া গেছে। যে কয়জন এখনো পুরানা দিনের লাহান এখনো ‘‌বস্তুনিষ্ঠতা‌’ মারাইতে যায়, তারা বাকি বলদ-ছাংবাদিকগো গন-ঐটা-মারা খাইয়া পলাইয়া বাঁচতে চায়। আপনার স্বাধীন চিন্তাশক্তি একটা বিপদজনক জিনিস। আপনার মাথার ভিত্রে যে মগজ আছে, এইটা যদি কোনক্রমে ‌’মুক্ত’ হইয়া যাইতে পারে, আপনি তো আর ম্যঙ্গো থাকলেন না। আপনারে তো আর মিডিয়া দিয়া কন্ট্রোল হইবো না।

‘মুক্ত’ হইলো একটা বিপদজনক জিনিস…আপনে মুক্তমনা, মুক্তচিন্তা করতে গেলেই শিষ্টেমের ঘন্টিঘরে পাগলা ঘন্টি বাইড়াইতে আল্লার কানের পোক বাইর কইরা ফেলে, এ্ক রাইতের মইধ্যে পুরা ৫৭ ধারা গজব আকারে নাজিল হয়। দ্যাশ ডাস্টবিন থাইকা গিয়া পড়ে গুয়ের ডাব্বায়। শিষ্টেম বড়ো ভয় খায় ‘মুক্ত’রে।

যেমনে কইরা পাকি হানাদার ডরাইতো মুক্তিরে, মুক্তিবাহিনীর আতঙ্কে নয়ানজুলিতে খাবি খাইতে খাইতে মউত ফরমাইতো, তেমন কইরাই নতুন জমানার মুক্তি… মুক্তচিন্তা বাহিনীরে দমন করতে ওই পাকি হানাদারের ভুত নতুন জমানায় এখনো অপারেশন সার্চলাইট চালায়।

দুঃখের বিষয় হইলো, এইবার সোভিয়েত নাই, ইন্ডিয়া নিজেই বিপদে আছে। মুক্তচিন্তার আমরা, নয়া-পাকি-পন্থী সরকারের হাতেই জান দিতেছি, ৫৭ ধারা এবং বাকি সকলের হাতে।

অথচ, ক্ষমতার সাথে আমাগের কিন্তু কোনদিনও কোন লড়াই ছিলো না। ধর্ম এবং উজবুক বালছালের বেশি বাড় বাড়তে দেইখা ত্যাক্ত হইয়া আমরা কইছিলাম, ধুত্তোর কিয়ের আল্লাখোদাভগবান? এইগুলার মায়েরে বাপ। আমি মানি না তোর চাপাইয়া দেয়া বালের ধর্ম। তুই তোর ধর্ম ‘পালন’ কর, আমি আমার জীবন যাপন করি।

কিন্তু ধর্ম তো ক্ষমতার একটা রূপ, আমরা বুঝতে পারলাম, যখন আমাদের উষ্টা খাইয়া ধর্মের অতি সামান্য কোঁকানি শুইনাই সরকার ওয়েবসাইট বন্ধ কইরা দিলো, পোলাপাইনেরে জেলে ভরলো, দেশভর রটাই দিলো… ‘নাস্তিক মারলে কোন বিচার নাই, নাস্তিক মারা ছহি তাই’‌।

এই অবস্থা পৃথিবীর অনেক দেশেই। দুঃখের বিষয় প্রায় সবগুলি দেশই ইসলামিক, মানে বাংলাদেশের মতো।
আপনার মন, দেহ সবকিছু শিষ্টেমের মালিকানায়। আপনি, আপনার সন্তান সকলেই জন্মায় শিষ্টেমের দয়ায়, শিষ্টেমের সেবার জন্যেই। আপনার দেহ আর মনের মালিকানা শুধু তারই। উপরে আল্লা, নিজে মুনাফা, দুয়ে মিলে আমরা পরাধীন উম্মাহ।

তাই শেখ মুজিবের মতো কইরা কে কইতে পারবেন…

 

এইবারের যুদ্ধ চিন্তার স্বাধীনতার যুদ্ধ, এইবারের যুদ্ধ মনের মুক্তির যুদ্ধ?

 

 

[পুর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত]