বিলেতের সুসভ্য সমাজে পাবলিক এটিকেট, বা আচরন এতোই পরিশীলিত হয়ে গেছে, যে পথ চলতে কারো গায়ে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা খুব একটা থাকে না। সকালে অফিসে যাবার সময়, কিংবা রাস্তাঘাটে বিবিধ উপলক্ষ্যে জনসমাগমে যতো ভীড়ই থাকুক না কেন, অযথা ধাক্কা লাগার সম্ভবনা বিরল।

তবে ধাক্কা যদি লেগেই যায়, দুই পক্ষই ‘এক্সকিউজ মি’, ‘সরি’ ইত্যাদি সামাজিক ভব্যতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বিষয়টা যে নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত, তা নিশ্চিত করেন, এবং যে যার পথে চলে যান।

এমনটাই দস্তুর।

কিন্তু এমন যদি ঘটে, যে মাত্রার চাইতে বেশি ধাক্কা লেগে গিয়েছে, কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ গায়ের জোর খাটিয়ে ধাক্কা দিয়েছে, তখন আহত ব্যাক্তি বিস্মিত চোখ নিয়ে বুঝবার চেষ্টা করে কারন টা কি?

আমার সাথে একবার এমনটা হয়েছিলো। ট্রেনে উঠবার সময় দুজন পাশাপাশি একই সাথে উঠতে গিয়ে অপর ব্যাক্তির সাথে একটু ঢুঁশোঢুঁশি হয়েছিলো। আমি এর কারনটা তখন না বুঝলেও, এখন বুঝি বিষয়টা হয়তো কিছুটা বর্নবাদ-আচ্ছন্ন ছিলো।

মনটা খারাপ হয়ে যায়। বর্নবাদ এমনই একটা বিষয় জন্মসূত্রে সাদা চামড়ার লোকজন মনে করে বাদামী চামড়ার লোকজন তাদের তুলনায় হীন।

আমি যদিও সিরিয়াস কোন বর্নবাদী আক্রমনের মুখে পড়ি নাই, বর্নবাদী আচরনের চিন্তা আমাকে ভারাক্রান্ত করে দেয়।

ভারতীয় খেলোয়ার ধোনী’র অকারন ধাক্কা দেবার বিষয়টা প্রথমে আমি ভেবেছিলাম খেলোয়ার সুলভ ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে মিটে যাবে। খেলা পরবর্তী বিচার সভায় আম্পায়ার এবং খেলোয়ারদের মাঝে জরিমানা এবং ভুল স্বীকারের মাধ্যমে বিষয়টি মিটে গেলেও আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, অনেকেই মুস্তাফিজের ভুল একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। এবং খেলোয়ার কেন ভুল স্বীকার করতে গেলেন, এর মাঝে মেরুদন্ডের অভাব প্রত্যক্ষ করছেন।

আরেক শ্রেণীর সিলিব্রিটি ব্লগার ছোট ছোট চোথা ছাড়ছেন কিছুক্ষণ পরপর, মনোভাব উষ্কে দিয়ে। খেলার বিষয়টাকে মিডিয়ায় এনে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক তিক্তকরন আজকের বিষয় নয়। একদিকে তীব্র হিন্দুঘৃনা অপরদিকে পুঁজিবাদ-বিরোধীতা, দুইয়ে মিলে বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের অবস্থা মোদি এসেও মেটাতে পারবে না।

বর্নবাদী আচরন এবং তার কারনে আমার মনক্ষুন্নতায় ফিরে যাই। রাস্তাঘাটে এ ধরনের আচরন ব্রিটেনে করে থাকে কম শিক্ষিত ব্রিটিশ অগারা, অথবা পুর্ব ইউরোপ থেকে চামড়ায় সাদা, মগজে গাধা লোকজন। এরা অপদার্থের মতো আচরন করলে, তাতে আমি দুঃখিত হলাম, কিন্তু তাতে কি সে আমাকে নীচু বানাতে পারলো? তার সাথে নিষ্ফল বিবাদে জড়িয়ে আমি কি ফল লাভ করবো? যথেষ্ট প্রমান থাকলে তাকে পুলিসের হাতে তুলে দিতে পারি, আইন রয়েছে, তারাই ব্যাবস্থা নেবে। চুকে গেলো।

ধোনী যদি বাঙালীকে হীন মনে করে ধাক্কা দিয়ে এক রান নিয়ে জগৎ জয় করে ফেলেছে মনে করে, তাতে কি বাঙালীর খুব বেশি ‘লস’ হয়ে গেলো?

এই যে কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রান নেবার চেষ্টাকে ফুলি ফাঁপিয়ে ফেনিয়ে তিলকে তাল করে রগরগে ভাষায় দুনিয়া উল্টে ফেলা হচ্ছে, তাতে কি বাঙালীর সত্যিকার ওজন বাড়ছে?

যেটা হচ্ছে, আমাদের আইসিসির পেসিডেন কামাল মিঞা যেটা করেছে, পদত্যাগ করে বিরাট কার্য হাসিল করে ফেলেছে।

বাংলাদেশের ওজন আসবে যখন র‍্যাংকিংএ আরো এগিয়ে যাবে, ইন্ডিয়া পরের বার খেলতে আসলে বুঝে শুনে খেলবে। ধোনীর ম্যাচ ফি ৭৫% হারিয়ে শিক্ষা পেয়েছে, পরের বার বাংলাদেশী খেলোয়ারের সাথে এই কান্ড করবে কি না, সন্দেহ আছে। কিন্তু এইসব মিডিয়াবাজি, ছোট্ট ছোট্ট সোতা ব্লগ ছেড়ে মানুষজনকে উত্তেজিত করে, সস্তা ভারতবিরোধীতা ছড়িয়ে পাকি মানসিকতাকে তুষ্ট করে কার কি লাভ, আমি বুঝি না।

ভারত যদি আমাদের সন্মান করতে হয়, তবে সেটা প্রকৃত কাজের জন্যেই করবে। যেখানে বাংলাদেশের ‘টেকনিক্যাল, প্রফেশনাল’ পুরো মিডল টায়ার চাকুরী সবই ভারতীয় দক্ষ লোকজন করে, সেখানে বাংলাদেশের ব্যপারে ভারতীদের সন্মান কি শুধু আর্টিকেল লিখে, সোতা ব্লগ আর পদত্যাগ করে অর্জন করা যাবে?